হাজার দুয়ারী ( প্যালেস মিউজিয়াম)
এই প্রাসাদটি ইতালির স্হাপত্যকলার এক জীবন্ত নিদর্শন। এই প্রাসাদের নামকরণ সম্পর্কে কেউই সঠিকভাবে বলতে পারেন না। সাধারণত এরুপ নামকরণের অর্থ অনেক দরজা বিশিষ্ট এই প্রাসাদ। এই প্রাসাদের অসংখ্য দরজা আছে যার অনেকগুলো সঠিক দরজা না হয়ে নকল দরজরূপে পরিগণিত হয়।
১৮২৯ খ্রীষ্টাব্দের ২৯ শে আগস্ট তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম কেভেন্ডিস ও বহু স্বনামধন্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে নবাব নাজিম হুমায়ূন জা এই প্রাসাদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। গাঁথুনির কাজে বহু পরিমাণে ডিমের কুসুমের ব্যবহার হয় বলে শোনা যায়।
এই প্রাসাদটি তিন তলা– প্রতি কক্ষের কারুকার্য অত্যন্ত মনোরম। এক তলায় অস্ত্রাগার, অফিস-কাছারি, রেকর্ড রুম ইত্যাদি আছে। অস্ত্রাগারে মোট ২৬০০ টি অস্ত্র সজ্জিত আছে - পলাশীযুদ্ধে এই সকল অস্ত্রসস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে বলে মনে হয়। এই সকল অস্ত্রসস্ত্র এর মধ্যে কতগুলো বিখ্যাত - যেমন আলিবর্দীর ব্যবহৃত তলোয়ার ও ওবহুনল বিশিষ্ট বন্দুক, নাদির শাহর শিরস্ত্রাণ, মীর কাসেম এর ছোরা, বিভিন্ন ধরনের ও আকারের কামান, ছোরা ইত্যাদি।যে ছোরার সাহায্যে মোহাম্মদী বেগ সিরাজ উদ্দৌলা কে হত্যা করেছিল সেটিও এই অস্ত্রাগারে রক্ষিত আছে।
দ্বিতল ও ত্রিতলে আর্ট গ্যালারি ও লাইব্রেরী অবস্হিত। আর্ট গ্যালারিতে বহু চিত্রশিল্পীর চিত্রকলা স্থানলাভ করেছে। এদের মধ্যে "The burial of Sir John More, Adom & Eve, Black Bent" বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
লাইব্রেরী ঘরে ছোট বড়ো আকারের বহু ধর্ম পুস্তক, কয়েক হাজার চুক্তি পত্র, নাটক, নভেল, তাম্রলিপি, ইতিহাস, প্রয়োজনীয় দলিলপত্র, বিদেশি ভাষায় লিখিত নানা গ্রন্থ সংগৃহীত আছে। আবুল ফজল রচিত আইন-ই-আকবরীর পাণ্ডুলিপিও এখানে দৃষ্ট হয়। এখানে বিরাট আকারের একটি সুবিশাল অ্যালবাম আছে যা দৈর্ঘ্যে ৩ হাত, প্রস্থে ২ হাত, ওজন প্রায় ২০ কেজি। তাছাড়া বাগদাদের বিখ্যাত লেখক হারুন-অল-রসিদের হস্তলিখিত কোরান সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সমগ্র কেল্লা কম্পাউন্ডের আয়তন ৪১ একর। এই প্রাসাদের সম্মুখে দুপাশে মনোরম বাগান শোভা পায়। একতলা প্যালেসের সম্মুখে বিশাল সিঁড়ি দরবার কক্ষ পর্যন্ত উঠেছে, সম্মুখে লম্বা গোলাকার স্তম্ভরাজি যাতে সুন্দর নক্সার কাজ রয়েছে ও সিঁড়ির দুপাশে সম্মুখভাগে অবস্থিত অবস্থিত দুটি সিংহমূর্তি এর সৌন্দর্যকে আরও মনোরম করেছে। বর্তমানে এই হাজার দুয়ারী প্যালেস ও ইমামবাড়া ভারতের আর্কিওলজিকাল সার্ভে মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং বর্তমান নামকরণ হয়েছে " হাজার দুয়ারী প্যালেস মিউজিয়াম"।
ভারত সরকারের অধিগ্রহণের পর সম্পূর্ণরূপে মেরামত ও রং করে ঝাড়বাতি গুলিকে বৈদুতিক আলো সংযোজিত করা হয়েছে। পুরাতন ছবি গুলিকে কেমিকাল ওয়াস করে সেগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। এরূপ শোনা যায় যে হাজার দুয়ারী প্যালেস নবাব হুমায়ুন জার সময় এর বহু মূল্যবান জিনিসপত্র ধুলায় আচ্ছাদিত অবস্থায় পড়ে আছে। এগুলি বিভিন্ন কক্ষে সযত্নে রক্ষিত হলে এই হাজার দুয়ারী প্যালেসে একটি বৃহৎ সংগ্রহশালায় পরিণত হবে আশা করা যায়।
Comments