বায়ুমণ্ডল
সংজ্ঞা: ভূপৃষ্ঠ থেকে 1600 কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ ভূপৃষ্ঠকে ঘিরে রয়েছে, তাকে বায়ুমণ্ডল বলে।
উপাদান: বায়ুমণ্ডল মূলত তিন প্রকার উপাদান দ্বারা গঠিত। 1) বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান,2) জলীয় বাষ্প,3) ধূলিকণা
1) গ্যাসীয় উপাদান
গ্যাসীয় উপাদান গুলির মধ্যে নাইট্রোজেন 78%, অক্সিজেন 21%, কার্বন ডাই অক্সাইড 0.03%এছাড়া বিভিন্ন নিষ্ক্রিয় গ্যাস যেমন আর্গন, হিলিয়াম, নিয়ন, কৃপ্টন, জেনন,এদের মধ্যে আর্গন (Ar) প্রায় 0.93% বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত। এছাড়া নাইট্রোজেন এর বিভিন্ন অক্সাইড, হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া,মিথেন, কার্বন মনো অক্সাইড, ওজন গ্যাস, খুব কম পরিমানে থাকে।
2) জলীয় বাষ্প
সূর্যের তাপে বিভিন্ন জলাশয়ের জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। এছাড়া বিভিন্ন কলকারখানা প্রচুর পরিমাণ জল বাষ্পীভূত করে। আমাদের দৈনন্দিন ক্রিয়া কলাপেও কিছু জল বাষ্পীভূত হয়ে এই বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। ঋতু অনুযায়ী এবং আবহাওয়ার গতিপথ পরিবর্তন করার জন্য বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমানে তারতম্য হয়। যেমন ভারতে দখিনা বাতাস এ বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত জলীয় বাষ্প বৃদ্ধি পায় আর উত্তুরে বাতাসে জলীয় বাষ্প হ্রাস পায়। সেকারণেই শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, ঠোঁট ফেটে যায়। বৃষ্টি হয় না আরও অনেক উদাহরণ আছে।
3) ধূলিকণা
বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত ধূলিকণার উপস্থিতির আমরা প্রমান পাই যখন দেখি উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা কোন বস্তুর উপর ধুলো বালির স্তর পড়েছে। আসলে এগুলো বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত ধূলিকণা যা ভারী হওয়ার কারণে অভিকর্ষের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের দিকে নেমে আসে। আর যেগুলো আরো ছোট এবং হালকা সেগুলো বায়ুমণ্ডলে ভাসমান অবস্থায় থাকে।
বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব
এই পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব অপরিসীম -
1) এই বায়ুমণ্ডল জীবজগতের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাণবায়ু অক্সিজেন ধারণ করে। এই কারণে আমরা পৃথিবীর প্রায় সকল স্থানে নিশ্বাস নিয়ে বেচে আছি।
একই রকম ভাবে সালোকসংশ্লেষ এর জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন ডাই অক্সাইড এই বায়ুমণ্ডল থেকে পাওয়া যায়।
2) মহাজাগতিক ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আমরা বেঁচে আছি এই বায়ুমণ্ডলের জন্য।
3) আমরা কথা শুনতে পাই এই বায়ুমণ্ডলের জন্য। শব্দ শূন্য মাধ্যমে চলতে পারে না। অর্থাৎ শব্দকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অভিযান করতে কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন। আমাদের মাঝে বায়ুমণ্ডল সেই মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
4) যে কোনো বস্তু বা প্রাণী বায়ুমণ্ডল ছাড়া উড়তে পারে না। অর্থাৎ এই বায়ুমণ্ডল আছে তাই পাখিরা আকাশে উড়তে পারে, বিমান আকাশে উড়তে পারে।
5) বিভিন্ন উল্কাপিন্ড থেকে এই প্রাণীকুল রক্ষা করে এই বায়ুমণ্ডল। উল্কা বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর সেটি বায়ুর সাথে অত্যধিক ঘর্ষণের ফলে পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনেক উল্কাপিন্ড ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। কিন্তু যদি আকারে বড় বা কম উত্তাপ উৎপন্ন হয় তবে সেটি ভূপাতিত হতে পারে।
6) রেডিও অনুষ্ঠান শুনতে পাওয়া। যার কারণ রেডিও তরঙ্গের বায়ুমণ্ডল থেকে প্রতিফলিত হওয়া।
7) বায়ুমণ্ডল না থাকলে দিনের আকাশ এত উজ্জ্বল হত না। শুধু সূর্যকে দেখা যেত আর সারা আকাশ রাতের মতো কালো দেখা যেত তবে মেঘ না থাকলে রাতে যেমন তারা দেখা যায় তেমন দিনেই তারা দেখা যেত।
8) এই বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রীন হাউস গ্যাস চাদরের মতো পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সেই কারণে রাত্রি অত্যধিক শীতল হতে পারে না।
9) এই বায়ুমণ্ডল আর পৃথিবীর চুম্বকের মতো আচরণের জন্য মেরুপ্রদেশে যখন টানা 6মাস রাত্রি থাকে তখন মেরুজ্যতির আলোতে এই অঞ্চল আলোকিত হয়ে যায়।
10) বর্তমানে অনেক স্থানে বায়ুপ্রবহের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়।
Comments